Name: কুমড়ো বড়ি
Kind: খাটি পণ্যে আসল স্বাদ
চারদিকে হাঁড় কাপানো শীত। তবুও, তা উপেক্ষা করে গ্রামাঞ্চলের ঘরে ঘরে এখন চলছে শীত মৌসুমের অন্যতম মজাদার গ্রামীন খাবার কুমড়া বড়ি তৈরী।
গৃহবধূরা ব্যস্ত সময় পার করছেন কুমড়া-ডালের তৈরি বড়ি বানাতে। শীতকে স্বাগত জানিয়ে প্রায় প্রত্যেক ঘরে ঘরে চলছে কলাই আর চালকুমড়া দিয়ে বড়ি বানানোর এই মহোৎসব। গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বড়ি তৈরির আয়োজন। প্রচন্ড শীতের মধ্যে পাড়া মহল্লার গৃহিণীরা একত্রিত হয়ে হাতে তৈরি মজাদার এ খাবার তৈরিতে বেশ ব্যস্ত থাকেন।
শীতের এক সকালে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার হাতেমপুর গ্রামে গিয়ে একটি বাড়িতে কয়েকজন গৃহবধূকে বড়ি বানাতে দেখা গেলো। তাদেরই একজন ফরিদা পারভিন বলেন, প্রতি বছর শীত এলে চালকুমড়া ও মাষকলাইয়ের ডাল দিয়ে বড়ি তৈরি করেন তারা। ওই বড়ি রোদে শুকিয়ে কৌটায় সংরক্ষণ করা হয় দীর্ঘদিন। পরে, বিভিন্ন তরকারি রান্নার সময় বড়ি ছেড়ে দিলে খাবারের স্বাদ বেড়ে যায়।
বড়ি তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, বড়ি তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় কালো মাসকলাই ডাল ও চাল-কুমড়া। বড়ি দেওয়ার আগের দিন মাষকলাইয়ের ডাল খোসা ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। সন্ধ্যায় চালকুমড়ার খোসা ছাড়িয়ে ভেতরের নরম অংশ ফেলে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর, কুড়ানি দিয়ে কুমড়া কুড়িয়ে মিহি করে পরিষ্কার কাপড়ে বেঁধে সারারাত ঝুলিয়ে রাখতে হয়। এতে, কুমড়ার পানি বের হয়ে ঝরঝরে হয়ে যাবে। এবার, কুমড়ার সঙ্গে প্রায় সমপরিমাণ ডাল ও হালকা লবণ দিয়ে ভালো করে মেশাতে হবে। মিশিয়ে ঢেঁকি বা যাতায় পিষে পেস্টের মতো একটি উপাদান তৈরি করেন। এই উপাদান তৈরিতে তাদের খুব পরিশ্রম করতে হয়।
এক সময় বড়ির এ উপাদান তৈরি করতে কেবলমাত্র ঢেঁকি ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে বেশ পরির্বতন এসেছে। বর্তমানে ঢেঁকি যখন বিলুপ্তির পথে তখন এর জায়গা দখল করে নিয়েছে ইঞ্জিনচালিত মেশিন। পেস্ট তৈরি হয়ে গেলে পরে কড়া রোদে পরিষ্কার কাপড়, চাটাই বা নেটের ওপর ছোট ছোট করে বড়ি দিতে হবে। অনেকে বড়ির স্বাদ বাড়াতে এর সঙ্গে কালোজিরা যোগ করেন। বড়ি আলো ঝলমলে রোদে ভাল করে শুকিয়ে নিতে হয়। মেঘলা দিনে বড়ি দিলে তা বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে যায়, তাই প্রয়োজন হয় তীব্র সূর্যরশ্মি। এটা ভালো করে রোদে শুকিয়ে কৌটায় সংরক্ষণ করে অনেকদিন পর্যন্ত রান্না করা যায়।
আরও কয়েকজন নারী জানান, একত্রিত হয়ে তারা বড়ি বানান। ধনী-গরিব সবাই এ বড়ির প্রতি দুর্বল। কেননা এই কুমড়া বড়ি প্রতিটি তরকারিতে বাড়তি স্বাদ এনে দেয়। এছাড়া, বড়ি ভেঙে পিঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ দিয়ে ভাজি করলে এক চমৎকার খাবার তৈরি হয়। বড়ি দিয়ে রান্না করা বেগুন, লাউ, ফুলকপি, আলু ইত্যাদি তরকারির যেন স্বাদই আলাদা।
বড়ি তৈরীতে ব্যস্ত গ্রামীণ নারী পারভীন ও মনোয়ারা জানান, শীত এলেই গ্রামে একে অপরকে বড়ি দিতে সহযোগিতা করার রেওয়াজ রয়েছে। কিন্তু, নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগ মেয়ে এসব শিখতে বা তৈরি করতে আগ্রহী নয়। স্থানীয় কিছু নারী জানান, যুগ যুগ ধরে শীত মৌসুমে বেশিরভাগ বাড়িতে কুমড়ো বড়ি দেওয়ার রেওয়াজ চলে আসছে। সময়ের আবর্তে বড়ি এখন বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। তারপরও অনেক মানুষ বাড়িতে বড়ি তৈরি করে খেতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।